ছেলেদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স:
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত প্রশ্ন প্রায় শোনা যায়: ছেলেদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স কখন? কেউ বলে ২৫-৩০ বছর, কেউ বলে ২৮-এর আগে ঠিক না। আবার কেউ তো স্রেফ এক কথা বলে দেয়, ‘যখন পরিবার বলবে।’ এবার একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করি, আসলে এই “উপযুক্ত বয়স” বিষয়টা কতটা ঠিক? এবং কোন কোন দিক থেকে এটা বুঝে নেওয়া ভালো?
বয়সের সংখ্যাটা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ?
আসলে, বিয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই যেটা সবাইকেই মানতে হবে। তবে হ্যাঁ, আমাদের সমাজের একটা গড় মানদণ্ড বলা যায়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ পরিবার মনে করে ছেলেদের বিয়ের বয়স শুরু হয় ২৫ বা তার পর থেকে। কারণ এই বয়সে পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়, চাকরিতে ঢোকার চেষ্টা চলছে বা অনেকেই নিজের ক্যারিয়ারে সেট হতে শুরু করে। কিন্তু শুধু চাকরি পেলেই কি বিয়ে করার সময় হয়, নাকি আরও কিছু ব্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ন?
আসলে বয়সের সংখ্যার চেয়ে আপনার মানসিক প্রস্তুতি, দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা, আর সম্পর্কের প্রতি সম্মানটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক প্রস্তুতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিয়ে মানে শুধু একটা অনুষ্ঠান নয়। এটা দুটো মানুষের জীবনের নতুন একটা অধ্যায়। এখানে দায়িত্ব থাকে, সমঝোতা থাকে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার একটা অঙ্গিকার থাকে। যদি একজন ছেলে শুধুমাত্র পরিবারের চাপে বা সমাজের রীতির কারণে বিয়েতে রাজি হয়, তাহলে কিন্তু পরে অনেক ঝামেলার মুখে পড়তে পারে। মানসিকভাবে একজন ছেলে যখন নিজের জন্য এবং তার সঙ্গীর জন্য দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হবে, তখনই বিয়ে করার কথা ভাবা উচিত।
অর্থনৈতিক দিকটাও ভাবা জরুরি
বাংলাদেশের প্রেক্ষটে, একজন ছেলের জন্য বিয়ে করার আগে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াটা খুব। কারণ আমাদের এখানে এখনও ছেলেদের বিয়ের পর পরিবার চালানোর দায়িত্বটাই বেশি দেওয়া হয়। তাই নিজের যাবতীয় খরচ মেট পাশাপাশি পরিবারকেও চালিয়েয়ার প্রস্তুতি থাকা উচিত। সেটা কোনও চাকরি হোক নিজের ব্যবসা। তাই ক্যারিয়ার শুরু করতেই হবে – এমন নয়, তবে একটা নির্দিষ্ট আর্থিক স্থিতিশীলতা থাকলে ব্যাপারটা সহজ হয়।
বয়স বেশি হলেও চিন্তার কিছু নেই
অনেকে মনে করেন, যদি ছেলে ৩৫-এর বেশি বয়সেও বিয়ে না করে, তাহলে “সমাজে কথা উঠবে।” কিন্তু সত্যি বলতে, এই চিন্তা একদম প্রাসঙ্গিক না। একটা সফল এবং সুখী বৈবাহিক জীবনের জন্য বয়স বড় ফ্যাক্টর না। বরং কীভাবে জীবনযাপন করতে চান, সেটা বড় বিষয়। তাই বয়স ২৫ হোক বা ৩৫, যদি আপনি স্থিতিশীল আর খুশি মনে থাকেন, তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সমাজের চাপ? কীভাবে সামলাবেন?
এই প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে ছেলেদের বয়স ২৮ পেরোলেই পরিবারের বড়রা চাপ দিতে শুরু করে। “তোমার বয়স তো অনেক হলো, কবে ঘরের বউ আনবে?” এই প্রশ্ন শুনে বেশিরভাগ ছেলেই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। কিন্তু আসলে এই পরিস্থিতি সামলানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পরিবারের সঙ্গে ব্যাখ্যা করে কথা বলা। যদি আপনার প্রস্তুতি না থাকে বা ক্যারিয়ার বা পড়াশোনার কারণে দেরি করার পরিকল্পনা থাকে, সেটা পরিবারকে বোঝান।
উপসংহার: নিজের সময়টা নিজেই ঠিক করুন
শেষ কথা হলো, বিয়ে করার বয়সটা কিন্তু একজন ছেলের নিজের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। সমাজ বা পরিবারের চাপে পড়ে নয়, নিজের মন, সম্পর্কের প্রতি সম্মান, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং মানসিক প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাই বয়সের সংখ্যা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, নিজের জীবনকে সুসংহত করে তবেই এই বড় সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখুন, বিয়ে কোনও দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। যারা সঠিক সময়ে বিয়ে করে, তারাই শেষ পর্যন্ত সুখী জীবন পায়।
আপনার কী মতামত? ছেলেদের বিয়ের বয়স নিয়ে আপনার চিন্তা কী? মন্তব্যে আমাদের জানান!